ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন?
ভ্রমণে যাবার আগে সবার যে চিন্তা টা মাথায় আসে তা হল থাকবো কোথায়। আর বেশিরভাগ মানুষ ভ্রমণে থাকার জায়গা বলতে শুধু হোটেল বুঝে৷ তবে বর্তমানে অপশন অনেক, যেগুলো সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। আপনাকে বুঝতে হবে কি কি সুবিধা আপনি চান তারপর এর উপর ভিত্তি করে আপনাকে খুঁজে নিতে হবে থাকার জায়গা। এই আর্টিকেলে জনপ্রিয় সব থাকার জায়গা নিয়ে আলোচনা করবো আর কোনটা কোন ধরনের ট্র্যাভেলার দের জন্য ভাল সেটাও জানবো।
Contents
হোটেল
হোটেল কি তা কমবেশি সবারই জানা। হোটেল আসলে লাক্সারিয়াস ট্যুরের জন্য বেটার৷ সাথে পার্টনার থাকলে হোটেল সাশ্রয়ী হয় কিন্তু একার জন্য ব্যায়বহুল৷ দুই তিন দিন রিল্যাক্স ট্যুরের জন্য হোটেল বেটার অপশন৷ আমার মতে হোটেলে থাকতে হলে ভাল হোটেলে থাকা উচিৎ, মিনিমাম থ্রি স্টার, যেখানে বেটার ফিচার অফার করবে। যেমন: ব্রেকফাস্ট, ভাল বেলকনি ভিউ, ভাল ওয়াশরুম, ফ্রি টয়লেটারিজ, আরামদায়ক বিছানা, বেটার রুম সার্ভিস। থ্রি স্টারের নিচের হোটেল বা বাজেট হোটেলে এসব সার্ভিস অনেক নিম্নমানের হয় নতুবা থাকেনা। যদি বাজেট থাকার জায়গা বা শুধু রাত কাটানো প্রয়োজন হয় আর এসব ফিচারের দরকার না থাকে তবে হোটেলের চেয়ে অনেক সস্তা অপশন আছে যা কিছু ক্ষেত্রে এসব সস্তা হোটেল থেকে বেটার। হোটেল বুকিং এর জন্য জনপ্রিয় সাইট হল booking.com বেশিরভাগ মানুষ এটাই ব্যবহার করে। এছাড়া রয়েছে agoda.com, expedia.com, trivago.com, google থেকেও সরাসরি হোটেল বুকিং দেয়া যায়।
হোস্টেল
যারা একা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বেষ্ট হল হোস্টেল। বাজেট ট্র্যাভেলারদের জন্য তো আশীর্বাদ বলা যায়৷ এখন এই হোস্টেল টা কি? হোটেলে যেমন একরুমে আপনি একাই নিজের মত থাকেন হোস্টেলে রুম শেয়ার করতে হয় আরেকজনের সাথে। এই কারনে হোস্টেল এর ভাড়া ৫০-৭০% কম হয় হোটেল থেকে। এয়ার কন্ডিশন রুম যেখানে আপনি ১৫০০ টাকার নিচে পাবেন না সেখানেই আপনি এয়ার কন্ডিশন হোস্টেল ২-৩০০ টাকা তে পেয়ে যাবেন, নো কিডিং।
এখন রুম শেয়ার বলতে এই না যে একই বিছানায় ঘুমাতে হবে। সব হোস্টেলেই বাঙ্ক বেড থাকে, ট্রেনের স্লিপার কোচের মত উপর নিচে বেড। এমন এক রুমে ৪-১৬ টা বেড থাকতে পারে। ৪ বেডের রুমের ভাড়া বেশি আবার ১৬ বেডের রুমের ভাড়া কম। রুমে কতটা বেড তার উপর ভাড়া কমবেশি হয়।
এখন হোস্টেলে থাকতে গেলে কিছু হোস্টেল ম্যানার আছে যা আপনার যানা উচিৎ হোস্টেলে থাকার আগে। পরে কোন আর্টিকেলে সেটা কভার করবো। হোস্টেল সবার জন্য নয়। আপনার জিনিষপত্রের সেফটির জন্য বেশিরভাগ হোস্টেলে লকারের ব্যবস্থা থাকে, তবে আপনাকে নিজের প্যাডলক বা ছোট তালা থাকতে হবে, সব হোস্টেল লকারের সাথে তালা দেয় না। আর মেয়েদের জন্যেও সেফ। প্রতিটা হোস্টেলেই দুই ধরনের রুম থাকে। মিক্সড ডর্মেটরি : ছেলে মেয়ে উভয়েই থাকতে পারে, গার্লস ডর্মেটরি: শুধু মেয়েদের জন্য। কিছু হোস্টেল আবার প্রাইভেট রুম ও অফার করে, তবে সেগুলোর ভাড়া হোটেলের মতই।
হোস্টেলের সবচেয়ে ভাল দিক হল আপনি অনেক নতুন বন্ধু বানাতে পারবেন। বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে আড্ডা দিতে পারবেন। হোস্টেলে যারা থাকে তাদের এভারেজ বয়স ১৮-২৮ এর মধ্যে। একা ভ্রমণে গেলে হোস্টেল বেষ্ট একারণে যে আপনি কখনোই একা অনুভব করবেন না। আশেপাশে কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবেন আড্ডা দেবার জন্য।
হোস্টেল বুকিং দেবার জন্য বেষ্ট সাইট হল Hostelworld.com এছাড়া booking.com এও পাবেন। তবে সব দেশে এখনো হোস্টেল কালচার টা ছড়িয়ে পড়েনি। উন্নত সব দেশেই আপনি হোস্টেল পাবেন। ইউরোপে যেখানে আপনি ১০০$ এর নিচে হোটেল পাবেন না, সেখানে ১৫-২০$ এর হোস্টেলে থাকতে পারবেন। আবার এশিয়াতে আপনি ২-৩০০ থেকে শুরু করে ৫-৭০০ এর মধ্যেই বেশিরভাগ হোস্টেল পাবেন।
গেস্ট হাউস এবং হোম স্টে
গেস্ট হাউস আর হোম স্টে এর নাম হয়ত অনেকে শুনে থাকবেন। এটি অনেকটা হোটেলের মতই তবে সস্তা। সাধারণত কোন বাড়ি কে কমার্শিয়াল থাকার জায়গাতে রূপান্তর করলে সেটিকে গেস্ট হাউস বলা হয়। কারো অতিরিক্ত বাড়ি গেস্টহাউসে রূপান্তরিত হয় আবার অনেক সময় গেস্ট হাউস বানানোর উদ্দেশ্যই বাড়ি নির্মাণ করা হয়। গেস্ট হাউস এশিয়াতে অনেক জনপ্রিয়।
সাধারণত রিমোট এরিয়া বা যেখানে টুরিস্ট কম যায় সেখানে হোটেল পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়, সেসব এলাকায় গেস্ট হাউস গড়ে উঠে। তাছাড়া অনেকে তাদের অতিরিক্ত বাড়িকে গেস্ট হাউসে রূপান্তর করে। গেস্ট হাউসে আপনি হোটেলের মত রুম সার্ভিস পাবেন না। তবে লোকাল দের সাথে মিশতে পারবেন আর বাড়িতে বানানো স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারবেন। গেস্ট হাউস সাধারণত নিরিবিলি হয় ।
হোম স্টে অনেকটা গেস্ট হাউসের মতই। আপনি এমন জায়গায় গেলেন যেখানে লোকাল রিলেটিভ ছাড়া থাকার কোন ব্যবস্থা নাই এমনকি গেস্ট হাউস ও নাই এমন এরিয়া তে আপনি লোকাল দের বাড়িতে থাকতে পারেন , এটাই আসলে হোম স্টে।
গেস্ট হাউস ইদানীং booking.com এ পাওয়া যায়। তবে হোম স্টের ব্যবস্থা আপনাকে যেখানে বেড়াতে যাবেন সেখানে গিয়ে করতে হবে। এসব অনলাইন এ খুব কম এভেইলেবল থাকে। দেখা গেল অনেক সময় কোন জায়গা তে বেড়াতে গিয়ে অনেক সস্তায় আপনি গেস্ট হাউস বা হোম স্টে পেয়ে গেছেন, আবার বিপরীত ও হতে পারে। তাই আগে একটু খোঁজ নিবেন যারা আগে ঘুরে এসেছে তাদের থেকে বা ইন্টারনেটে সার্চ করে , যে সে জায়গাতে থাকার ব্যবস্থা কি?
Air BnB
এয়ার বিএনবি হল একটা দুনিয়া বদলে দেবার মত আইডিয়া, ভ্রমণের পুরা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আসলো। Air BnB হল বিশ্বের সর্ববৃহৎ হোটেল চেইন যাদের নিজস্ব কোন হোটেল নাই। খুব সহজে বললে Air BnB হল রুম বা এপার্টমেন্ট শেয়ারিং পদ্ধতি। অনেকের বাসায় অতিরিক্ত রুম থাকে , তারা চাইলে সেটি ফেলে না রেখে ভাড়া দিতে পারে। আপনি যদি ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে যান বা বন্ধুদের তবে এটি আপনার জন্য বেস্ট অপশন। এটার সবচেয়ে ভাল দিক হল আপনি হোটেলের চেয়ে বেটার থাকার জায়গা পাবেন কম ভাড়ায় আর লোকালদের সাথে মিশতেও পারবেন। এতে আপনি কিছু লোকাল টিপস এন্ড ট্রিক্স আপনার Air BnB হোস্টের থেকে জেনে নিতে পারবেন , যা আপনার সেফটি এবং খরচ বাচাতে কাজে দিবে। Air BnB তে অনেক ফিচার থাকে, যেমনঃ রান্নার ব্যবস্থা, লন্ড্রি ব্যবস্থা, ফ্রি ইন্টারনেট, ব্রেকফাস্ট। মোটকথা আপনি হোটেলের চেয়ে বেশি ফিচার পাবেন অনেক কম টাকায়। অনেক দেশে Air BnB হোস্টেলের চেয়েও সস্তা।
যেমন আমি একবার হংকং এ থাকার জায়গা খুঁজছিলাম, সেখানে দেখি ৫০০০ টাকার নীচে কোন হোটেল বা হোস্টেল কিছুই নাই, কিন্তু Air BnB আছে ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যেই। আবার সিঙ্গাপুরে আমি ৫ বেডের এপার্টমেন্ট পেয়েছিলাম ২০০০ টাকা প্রতি রাত ভাড়ায়, যেখানে হোস্টেল ১২০০ টাকার নীচে পায়নি। তাই একমাত্র হোস্টেল কে সস্তা ভাবা যাবে না , অনেক জায়গা তে আপনি Air BnB তে কম খরচে থাকতে পারবেন। উন্নত দেশ গুলোতে স্টুডিও এপার্টমেন্ট ভাড়া পাওয়া যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শেয়ারড রুম থাকে, আবার পুরা এপার্টমেন্ট ও ভাড়ায় পাবেন।
দেশের বাইরে আপনার যদি কোন কাজের কারণে এক জায়গাতে লম্বা সময় থকা লাগে তবে এর চেয়ে বেস্ট অপশন কিছু নাই। এখন সেফটির জন্য আপনি ভেরিফাইড হোস্ট আর আগে যারা থেকেছে তাদের রিভিউ দেখে বুকিং দিবেন। Air BnB তে আপনি হোটেলের মতই এয়ার কন্ডিশন রুম , টিভি , ফ্রিজ সব সহ পাবেন, যত বেশি ফিচার থাকবে তার সাথে ভাড়া ও বাড়বে। আবার অনেক দেশের খাবার আপনার সহ্য না ও হতে পারে, সেক্ষেত্রে রান্নার সুবিধা সহ রুম নিলে আপনি সহজেই রান্না করে খেতে পারবেন। তাছাড়া নিজে রান্না করে খেলে আপনার ভ্রমণের খরচ ও অনেক কমে আসবে।
শেষ কথা হল, আপনি যদি ফ্যামিলি নিয়ে বা বন্ধুদের সাথে এমনকি অনেক সময় একা বাজেট ট্যুর দিতে চান তবে Air BnB হল আপনার জন্য বেস্ট। আপনি গুগল প্লে-স্টোর বা অ্যাপেল স্টোর থেকে তাদের অ্যাপ নামাতে পারেন অথবা তাদের ওয়েবসাইট- https://www.airbnb.com এ গিয়ে আপনি কখন থাকবেন, কয়টা রুম, বেডরুম আর কি কি ফিচার চান এসব সিলেক্ট করে সার্চ দিলে আপনাকে সে অনুসারে এপার্টমেন্ট বা রুম দেখাবে সাথে কত টাকা প্রতি রাতে খরচ হবে সেটাও দেখতে পারবেন।
কাউচসার্ফিং
CouchSurfing ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আশীর্বাদ সরূপ। ১৯৯৯ এ কেসি ফেন্টন আমেরিকার বোস্টন থেকে আইসল্যান্ড এর সস্তা প্লেন টিকেট পায়। সে তখন ফ্রী বা সস্তা থাকার জায়গা খুঁজছিল, তাই সে আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর ডাটাবেজ হ্যাক করে এবং ১৫০০ ছাত্রকে র্যান্ডমলি ইমেইল করে তাদের বাসায় থাকার জায়গার জন্য। সে ৫০-১০০ টির মত অফার পায় এবং একজনের বাসায় থাকে। বোস্টনে ফেরার সময় তার মাথায় CouchSurfing এর যুগান্তকারী আইডিয়া টি আসে। ১২ জুন ১৯৯৯ এ CouchSurfing এর ডোমেইন কিনে ফেলে, যদিও বিশ্বব্যাপী এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে।
এভাবেই শুরু হয় ভ্রমণকারীদের ফ্রি থাকার জায়গা আর সোশ্যাল মিডিয়া CouchSurfing এর। এটি অনেকটা Air BnB এর মতই, তবে বলতে হবে Air BnB ই আসলে CouchSurfing এর মত। বাসার অতিরিক্ত জায়গাতে ভ্রমণকারীদের থাকার ব্যবস্থার আইডিয়াটা কাউচসার্ফিং এর ই। সহজে CouchSurfing হল ফ্রি Air BnB, অর্থাৎ Air BnB তে যেমন আপনাকে থাকার জন্য টাকা দিতে হত , সেখানে CouchSurfing এ আপনি বিনে পয়সায় থাকতে পারবেন। আপনাকে যে হোস্ট করবে সে আপনার থেকে কোন টাকা নিতে পারবে না। তবে হোস্টের জন্য উপহার নিয়ে যাওয়া কাউচসার্ফিং থেকে রিকমেন্ড করে। এমন না যে দামি কিছু নিতে হবে বা এটি বাধ্যতামূলক, আপনি ফ্রি থাকবেন তার কিছুটা দায় মেটান বলা যায়।
শুরু থেকে ২০১১ পর্যন্ত কাউচসার্ফিং নন-প্রফিট ছিল। এরপর এটি ফর-প্রফিট অর্গানাইজেশন হয়ে যায়। এখন কাউচসার্ফিং এ ভেরইফাইড মেম্বার হবার জন্য এককালীন ৬০ ডলার পেমেন্ট করতে হয়। ভেরিফাইড হলে আপনি আনলিমিটেড মেসেজ বা থাকার রিকুয়েস্ট পাঠাতে পারবেন আর আপনি ভেরিফাইড হলে আপনি সহজেই হোস্ট পাবেন। ফ্রি বা নন-ভেরিফাইড হলে আপনার ম্যাসেজ লিমিটেড আর হোস্ট পাওয়া একটু কঠিন। ৬০ ডলার দিয়ে ভেরিফাইড হওয়া বেস্ট ইনভেস্টমেন্ট। উন্নত দেশে হোটেলে এক রাত থাকার ভাড়া দিয়ে আপনি লাইফটাইম এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
এর সবচেয়ে বেস্ট পার্ট হল ফ্রি তে থাকা, লোকাল সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও কাছ থেকে জানতে পারা, তাছাড়া লোকাল টিপস এন্ড ট্রিক্স ত আছেই। অনেকের মাথায় সেফটির ব্যাপার টা আসতে পারে, ভেরিফাইড আর রিভিউ দেখে হোস্ট সিলেক্ট করলেই ভাবনার কিছু নাই। ১৭-১৮ বছরে ৫-৬ টির মত অঘটন ঘটেছে , আর যেহেতু হোস্টের সব তথ্য থাকে তাই ধরা পড়ার সম্ভাবনা অনেক। কাউচসার্ফিং এ অঘটন ঘটার সম্ভাবনা অনেকটা চিড়িয়াখানাতে গিয়ে বাঘের কবলে পড়ার মত। তাই বলা যায় যথেষ্ট সেফ। তাই আপনার যা ভাল মনে হয় করবেন।
অন্য সব বুকিং সাইট এর মতই এটি কাজ করে। https://www.couchsurfing.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করতে হবে। তারপর আপনি যেখানে যেতে চান সেই জায়গার নাম লিখে সার্চ দিন, তারপর কোন তারিখ থেকে কোন তারিখ পর্যন্ত থাকবেন আর কতজন থাকবেন সেটা দিয়ে সার্চ এ ক্লিক করলে সেই এরিয়ার যারা হোস্ট তাদের লিস্ট দেখাবে। এরপর আপনি তাদের ম্যাসেজ এবং থাকার রিকুয়েস্ট পাঠাবেন, এরপর ভাগ্য ভাল থাকলে আপনি সহজেই হোস্ট পেয়ে যাবেন।
কাউচসার্ফিং উন্নত দেশগুলোতে অনেক জনপ্রিয়। আমেরিকা, কানাডা , জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, চাইনা এসব দেশে সবচেয়ে বেশি রেজিস্টার্ড মেম্বার আছে। মজার ব্যাপার হল সব ব্যয়বহুল দেশে সবচেয়ে বেশি রেজিস্টার্ড মেম্বার আছে। কাউচসার্ফিং এখন বিশ্বের সব দেশেই আছে। তাই যদি ফ্রিতে থাকতে চান তবে কাউচসার্ফিং ব্যবহার করতে পারেন। আর থাকার আগে নিজের রিসার্চ করে নিবেন।
ক্যাম্পিং
ক্যাম্পিং হল আসল এডভেঞ্চার, ক্যাম্পিং এ আপনি প্রকৃতির সাথে পুরোপুরি মিশে যেতে পারবেন। ক্যাম্পিং এ আপনি আপনার জীবনের সেরা রাতের আকাশ দেখার সুযোগ পাবেন। হোস্টেল বা কাউচসার্ফিং এর আদর্শ বিকল্প হল ক্যাম্পিং। আর ক্যাম্পিং পুরোপুরি ফ্রি, তবে কিছু জায়গাতে ক্যাম্প-সাইটের জন্য পে করতে হয়। আপনি যদি পে করতে না চান তবে একটু জঙ্গল ধরনের জায়গা তে গিয়ে সমতল জায়গা খুঁজে ক্যাম্প করে ফেলুন , ব্যাস হয়ে গেল আপনার হোম সুইট হোম।
ক্যাম্পিং করে আপনি ভ্রমণে অনেক টাকা বাচাতে পারবেন। আপনার কাছে তাঁবু থাকলে আপনার আর থাকার জায়গা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হবে না, কারণ আপনি ব্যাগে করে ঘর নিয়ে ঘুরছেন। সাথে তাঁবু থাকা মানে আপনার কাছে রাত কাটানোর অনেকগুলো দুয়ার খুলে গেল।
আপনি যদি উন্নত দেশগুলোতে সস্তায় ঘুরতে চান তবে আপনার অবশ্যই ক্যাম্পিং করতে হবে। তাঁবু ছাড়া নর্থ আমেরিকা বা ওয়েস্ট ইউরোপ এর দেশ গুলোতে সস্তায় ভ্রমণ করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
ক্যাম্পিং নিঃসন্দেহে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা তবে এর কিছু অসুবিধে ও আছে। প্রথম অসুবিধা হল ক্যাম্পিং গিয়ার এর দাম অনেক বেশি। সস্তা তাঁবু বা ক্যাম্পিং গিয়ার পাওয়া যায় কিন্তু বাজে বা লো-কোয়ালিটি ক্যাম্পিং গিয়ার থাকা আর না থাকা এক সমান। সস্তা ক্যাম্পিং গিয়ার আপনাকে ভাল ভুগাবে, আপনার ঘুম ঠিকমত হবে না আবার এগুলো নষ্ট ও খুব জলদি হয়। আরেকটা অসুবিধা হল এর ওজন অনেক বেশি। তবে হালকা ওজনের তাঁবু পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল।
তাই বলে অতিরিক্ত ব্যয়বহুল না, আপনি ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই ভাল কোয়ালিটির তাঁবু পেয়ে যাবেন। একটা ভাল তাঁবু আপনি অনেক বছর ব্যবহার করতে পারবেন, এমনকি বাকি জীবনের পুরা ভ্রমণে চলবে। তাই সস্তা না খুঁজে ভাল কোয়ালিটির তাঁবু কেনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর তাঁবু কেনার সময় ওজনের ব্যাপার টা অবশ্যই আপনার মাথায় থাকা উচিৎ। অতিরিক্ত ওজন হয়ে গেলে আপনার টা আপনার ভ্রমণের মজা মাটি করে দিবে।
নতুন কোন দেশে ক্যাম্পিং করার আগে ইন্টারনেটে খুঁজে দেখবেন আগে যারা ভ্রমণ করেছে তাদের অভিজ্ঞতা কি এবং তাদের উপদেশ মেনে চলার চেষ্টা করবেন। অনলাইনে ক্যাম্প সাইট খোঁজার অনেক ওয়েবসাইট আছে। তাছাড়া অনেক জায়গাতে ক্যাম্পিং করা অবৈধ, তাই আগে লোকালদের থেকে জেনে নিবেন। আর তাঁবু কিনে সরাসরি ট্যুরে গিয়ে প্রথম ক্যাম্পিং করা একদম বোকামি হবে। তাই তাঁবু কিনে নিজের বাড়ির আশপাশে তাঁবু খাটিয়ে নিজেকে ক্যাম্পিং এর সাথে মানিয়ে নিন। কিভাবে তাঁবু টানতে হয় আর গুছাতে হয় তা একটু শিখে নিন। এতে করে ট্যুরে গিয়ে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে পারবেন।
ভ্রমণে গিয়ে আপনার সবধরনের থাকার জায়গা ব্যবহার করা উচিৎ, প্রত্যেকটি আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি দিবে। এভাবে আপনি বুঝতে পারবেন কোন ধরনের থাকার ব্যবস্থা আপনি বেশি উপভোগ করছেন। আপনার পরবর্তী যাত্রা শুভ হোক।
[…] থাকার জায়গা নিয়ে বিস্তারিত জানতে “ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন?” আর্টিকেল টি […]
খুবই দরকারী টিপস। আমার মনে হয়, নির্ভিক ভ্রমনের অন্যতম অন্তরায় ভাল মতো থাকার জায়গা খুজে না পাওয়া।