ভ্রমণের সময় কিভাবে টাকা নিরাপদে লুকিয়ে রাখবেন?

ভ্রমণের সময় কিভাবে টাকা নিরাপদে লুকিয়ে রাখবেন?

Sharing is caring!

ঘুরতে গিয়ে আপনার যে জিনিষটা তে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ টা হল আপনার সেফটি আর আপনার টাকার সেফটি।  ভ্রমণে গিয়ে আমেজিং সব এক্সপেরিয়েন্স হয় তা যেমন ঠিক তেমনি কোনভাবে যদি আপনি টাকা হারিয়ে ফেলেন তবে আপনার পুরা ট্যুর ই মাটি হয়ে যাবে। দেশের বাইরে টাকা হারালে তো ভোগান্তির অন্ত নেই। অনেক সময় হয়তো ভুলে বাস ট্রেনে ব্যাগ ফেলে আসতে পারেন , বা ছিনতাইকারীর কবলেও পড়তে পারেন। এমন হবে তা বলছি না, তবে আপনার এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এমন কিছু যেন না হয় তাই যে যে পদক্ষেপ নিতে পারেন তা নিয়েই এই আর্টিকেল টি।

Contents

টাকা কয়েক জায়গা তে রাখা

এক জায়গাতে যদি সব টাকা রাখেন আর হারিয়ে ফেলেন তবে সব যাবে একেবারে। তাই টাকা বিভিন্ন জায়গাতে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কম করে হলেও ২-৩ জায়গা তে টাকা ভাগ করে রাখা উচিৎ, এক জায়গা থেকে হারালেও সমস্যা হবে না।

টাকা সবসময় নিজের কাছে রাখা

শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে টাকা লুকিয়ে রাখা বেস্ট ডিসিশন। বেশিরভাগ মানুষ ব্যাগে রেখে যায়, যদি আপনার ব্যাগ থেকে চুরি হয়ে যায় কিছু করার থাকবে না। তাই অল্প কিছু ব্যাগে রেখে বাকিটা নিজের সাথে রাখা বেটার।

দিনে কতটা খরচ হতে পারে সে হিসাবে মানিব্যাগে টাকা রাখুন

আপনি যখন ভ্রমণ করবেন ২/১ দিনেই বুঝতে পারবেন আপনার দিনে কত টাকা খরচ হতে পারে। মানিব্যাগে অতিরিক্ত টাকা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অনেক সময় আপনাকে অনেক খুচরা পেমেন্ট করতে হবে, সেগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকুন। ৫ টাকার বিল দিতে গিয়ে ৫০০০ টাকার নোট ভর্তি মানিব্যাগ সবার সামনে বের করা বোকামি হবে।

ডামি মানিব্যাগ সাথে রাখা

এখন দেখা গেল এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন যেখানে ছিনতাইকারীর হাতে আপনাকে কিছু তুলে দিতে হবে। এমন সময়ে আপনি সহজেই আপনার ডামি বা এক্সট্রা মানিব্যাগ তুলে দিতে পারবেন এই ভেবে যে আপনার বাকি টাকা সেফ আছে। ডামি মানিব্যাগে অল্প কিছু টাকা আর পুরাতন কাগজপত্র, ভিজিটিং কার্ড এসব দিয়ে ভরে রাখবেন, যেন দেখে ফেইক মনে না হয়। আপনার দিন খরচের টাকা এই মানিব্যাগে রাখতে পারেন।

বেশি টাকা থাকলে সেটা কিভাবে সাথে নিবেন?

টাকা লুকানোর জন্য নিজের শরীরের থেকে বেস্ট অপশন আর কিছু হয় না। এখন নিজের শরীরে কিভাবে লুকাবেন সেগুলো জানি।

হিডেন মানি বেল্ট

লুকানো পকেট সহ বেল্ট সাথে নেয়া। নীচে ছবি  দেয়া হল, এরকম বেল্টের সুবিধা হল আপনি এটি সাধারণ বেল্টের মত পড়তে পারবেন কেউ আপনাকে সন্দেহ করবে না বা বুঝতেও পারবে না যে এখানে টাকা আছে। দেশে এটি পাওয়া মোটামুটি দুষ্কর, আমি চায়না থেকে আনিয়েছি , ট্রাস্ট মি অনেক কাজের জিনিষ এটা। আর ট্র্যাডিশনাল মানি বেল্টের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিরাপদ।

লুকানো পকেট

আমি ট্যুরে যাবার আগে আমার তিনটা প্যান্টে ৪ টা লুকানো পকেট লাগিয়ে নিয়েছিলাম এলাকার দর্জির কাছে, ১২০ টাকা নিয়েছিল মাত্র । আমার কাছে এটার চেয়ে টাকা লুকানোর ভাল কোন পদ্ধতি নাই। আমি একটা প্যান্টে এমন জায়গাতে পকেট লাগিয়েছিলাম যে টাকা বের করতে হলে আমার পুরা প্যান্ট খুলতে হত। ছিনতাইকারীর বা অন্য কারো চিন্তায় ও আসবে না যে অমন জায়গায় পকেট থাকতে পারে। অনেক গুলো টাকা সাথে নিয়ে এভাবে ঘুরতে কোন দুর্ভাবনা হয় নি আমার। তাই যদি লম্বা ট্যুরে যান তবে আপনার সব প্যান্ট আর শার্টে এমন হিডেন পকেট লাগিয়ে নিবেন।

রিষ্ট ওয়ালেট ব্যবহার করা

এক ধরনের রিষ্ট ওয়ালেট পাওয়া যায় , যাতে আপনি অল্প কিছু টাকা রাখতে পারবেন। এটা আপনি চাইলে পছন্দের কোন কাপর দিয়ে নিজেই বানিয়ে নিতে পারেন। বা দেশের বাইরে থেকে আনাতে পারেন। এটা হাতে পড়লে অনেকটা ব্রেসলেট এর মত দেখাবে , কেউ সহজে বুজতে পারবে না।

জুতার ভিতরে রাখতে পারেন

জুতার ইনসোলের নীচে রাখতে পারেন , যদিও এভাবে টাকা রাখলে একটু নষ্ট হবার চান্স থাকে। তবে ছোট প্লাস্টিক এর মধ্যে একটা নোট রেখে, ইনসোলের নীচে রেখে দিতে পারবেন। কেও সহজে জুতায় টাকা খুঁজতে যাবে না।

বইয়ের ভিতর রাখা

সাথে একটা বই নিয়ে ঘুরতে পারেন, বই পড়াও হবে সাথে টাকা লুকানো ও যাবে। বইয়ের দুইটা পাতার মাঝে একটা ১০০$ এর নোট রেখে গ্লু দিয়ে পাতা দুইটা কে জোড়া দিয়ে দিলেই সহজে বোঝা যাবে না।

মানি বেল্ট

অনেকেই বাইরে গেলে কমন এই মানি বেল্ট ব্যবহার করে। এয়ারপোর্ট, ইমিগ্রেশনের সময় কাজে দেয় কিছুটা, তখন পাসপোর্ট, বোর্ডিং পাস , প্রয়োজনীয় কাগজ-পাতি সহজে এক্সেস করার জন্য। এরপর ঘুরে বেড়ানোর সময় এই বেল্ট পড়ে ঘুরে বেড়ানো আমার কাছে নিরাপদ মনে হয় না। এই বেল্ট পরে বেড়ানো মানে আপনি সবাইকে বলেই দিচ্ছেন যে দেখ আমার কোথায় টাকা আছে। এই বেল্ট নিয়ে ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হলে পুরাটা খুলে দিতে হবে।

মানি বেল্ট

শেষ কথা

আমি আমার প্রথম সলো ট্রিপে যাব, একমাস লম্বা ট্যুর। আমার কাছে প্রপার কোন ক্রেডিট কার্ড ছিল না, যেটা ছিল সেটা থেকে দেশের বাইরে টাকা বের হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা ছিল না। তাই আমাকে একমাসের জন্য পুরা ক্যাশ টাকা সাথে নিতে হবে। ট্যুরে যত টাকা লাগবে বাজেট করেছিলাম, ঝামেলা ছাড়া ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করার জন্য অনেক বেশি টাকা সাথে নিতে হয়েছিল। প্রায় ১৭০০$ নিয়ে ঘুরেছি, অনেক ব্লগ আর্টিকেল পড়ে টাকা নিরাপদে রাখার ট্রিক্স গুলো রপ্ত করেছিলাম আর কাজেও লাগিয়েছিলাম। কোন বিপদে পড়িনি আর এক পয়সাও হারায় নি।

আর খুব বাজে সিচুয়েশন এর জন্য , মানে যদি সবকিছু হারিয়ে ফেলি তখন কি হবে! এমন কিছুর জন্য আমি দেশে আমার খুব কাছের একজন কে আমার ডেবিট কার্ড দিয়ে গিয়েছিলাম। যেন কোন বিপদে পড়লে সে আমার কার্ড দিয়ে টাকা তুলে পাঠাতে পারে। সবার এমন একটা ব্যাকআপ দেশে রেখে যাওয়া উচিৎ।

উপরের সব বুদ্ধি গুলো কাজে লাগালে আশাকরি আপনিও ভ্রমণে আপনার টাকা নিরাপদে রাখতে পারবেন। আর্টিকেল টি কেমন লাগলো অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। আর আপনার এর বাইরে টাকা লুকানোর কোন বুদ্ধি থাকলে তা শেয়ার করুন কমেন্টে।

Facebook Comments