প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপস যা আপনার ভ্রমণ কে আরও সহজ করে তুলবে।

প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপস যা আপনার ভ্রমণ কে আরও সহজ করে তুলবে।

Sharing is caring!

যখন টেকনোলজি এত উন্নত ছিল না, তখন ভ্রমণ একটু কঠিন ছিল বলা যায় আবার মজার ও ছিল। টেকনোলজি না থাকার কারণে তখন মানুষকে পদে পদে আরেকজনের থেকে সামনের পথ জানতে হত, এতে স্থানীয় দের সাথে একটা ইন্টার‍্যাকশন হত , এই বাহানায় স্থানীয় মানুষ তাদের রীতিনীতি সম্পর্কে সহজে যেনে নেয়া যেত। এখন সবার হাতের মুঠোয় সেলফোন, গুগল ম্যাপ ই সব বলে দেয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে গুগল ম্যাপ স্থানীয়দের চেয়েও বেশি তথ্য রাখে।

যাই হোক সবকিছুর ই ভাল আর মন্দ দিক আছে। টেকনোলজি উন্নত ছিল না বলে আগে ভ্রমণ করা একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল, এখন তা পানির মত সহজ। ইন্টারনেট কানেকশন আর একটা স্মার্টফোন থাকলেই দুনিয়াজোড়া তথ্য আপনার হাতের মুঠোয়। আজকে আলোচনা করবো এমন কিছু অ্যাপস নিয়ে যা আপনার ভ্রমণে অনেক কাজে দিবে।

Contents

ম্যাপ সম্পর্কিত অ্যাপস

গুগল ম্যাপ

এই একটা অ্যাপ থাকলে আপনার কোন কিছু নিয়েই ভাবতে হবে না। শুধু পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি কিভাবে যাব এটা নয়, এছাড়া আরও অনেক কাজ গুগল ম্যাপ দিয়ে করা যায়। যেমন আশেপাশে ঘোরার জায়গা কি কি আছে, সেই জায়গার ছবি ,কতটা সময় সবাই সেখানে থাকে এভারেজে, এন্ট্রি ফি আছে কিনা , কখন বন্ধ হয়, কখন খুলে এসব জানা যায়। খাবার রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করা, ফুড মেনু পর্যন্ত পাওয়া যায়, হোটেল বুকিং ও দেয়া যায় ম্যাপ থেকে। উন্নত দেশগুলোতে বাস ট্রেনের শিডিউল , কত নম্বর বাস বা ট্রেন যায় সব তথ্য থাকে। এছাড়া ট্যুরে যাবার আগে বিভিন্ন জায়গা মার্ক করে ট্যুর প্ল্যান করা যায়। তাই গুগল ম্যাপ রপ্ত করতে পারলে আপনার চিন্তা অর্ধেক কমে যাবে। আপনি না চিনলে কি হবে, গুগল ম্যাপ সব চিনে। আর হ্যাঁ, যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন যাবার আগে সেখানকার অফলাইন ম্যাপ সেভ করে রাখবেন এতে করে ইন্টারনেট ছাড়াও ম্যাপ চালাতে পারবেন।

My Maps

এটা গুগলের ই একটা সার্ভিস। এটা ব্যবহার করে আপনি আপনার পুরা ট্যুর প্ল্যান করতে পারবেন, কি কি দেখবেন , কিভাবে যাবেন একদম বিস্তারিত ট্যুর প্ল্যান মাপ সহ এতে তৈরি করতে পারবেন। আবার চাইলে সবার সাথে শেয়ার করতে পারবেন। আমার কাছে বেশ কাজের মনে হয়েছে।

Maps.me

এটা গুগল ম্যাপের মতই, তবে এর বিশেষত্ব হল এটা অফলাইন ম্যাপ। আপনি যাবার আগে পুরা দেশ বা শহরের ম্যাপ নামিয়ে নিতে পারবেন। ইন্টারনেট না থাকলেও ঝামেলা নাই। একাধিক ম্যাপ থাকা ভাল, অনেক সময় গুগল ম্যাপ ঝামেলা করে।

Moovit

এটাও একটা ম্যাপ অ্যাপ তবে এর বিশেষত্ব একটু ভিন্ন। আমি মালয়েশিয়া তে যখন গিয়েছিলাম তখন লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল, নতুন কারো জন্য যথেষ্ট কনফিউজিং। গুগল ম্যাপে শুধু ট্রেনের টাইম শিডিউল দেখাতো কিন্তু বাসের না। এই অ্যাপে বাস ট্রেন সব কিছুর শিডিউল দেখাতো। ধরা যাক আপনি পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি সিলেক্ট করলেন আপনাকে বললে দিবে এই রুটে কত নম্বর বাস চলে, কখন কোথায় থেকে ছাড়বে। আমি আগে এই অ্যাপ টি সম্পর্কে আগে জানলে অনেক টাকা বাচাতে পারতাম।

কারেন্সি কনভার্টার

ম্যাপের পর যদি আপনার কোন অ্যাপ লাগে তবে সেটি হল কারেন্সি কনভার্টার। XE Currency হল সবচেয়ে বেস্ট। আপনি যখন ই কোন বিল পে করবেন খুব সহজে বের করতে পারবেন কত ডলার বা টাকায় কত পড়ছে। এতে আপনার কোনকিছু কেনার সময় দামদর করতে বেশ সুবিধা হবে। ইন্দোনেশিয়া তে গিয়ে টাকার হিসাব বুঝতে বেশ ঝামেলা হয়েছিল আমার, এই একটা অ্যাপের জন্য আমার কাজ ৭৫% কমে গিয়েছিল। এইটা অফলাইন এও কাজ করে তাই আপনাকে বার বার অনলাইনে যেতে হবে না। তাই অবশ্যই এটি ইনস্টল করে নিবেন।

ট্রান্সপোর্ট অ্যাপ

এখন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ অনেক জনপ্রিয়, এছাড়া বিভিন্ন দেশে ট্যাক্সি বুক দেয়ার আলাদা অ্যাপ আছে। এগুলো দেশ ভেদে ভিন্ন, তাই যেখানে যাচ্ছেন যাবার আগে এইটা সম্পর্কে যেনে যাবেন। অনেক সময় কিছু বুঝতে না পারলে খুঁজে না পেলে এসব অ্যাপ, এস্কেপ প্ল্যান হিসাবে কাজে দেয়। Uber অনেকগুলো দেশে চলে, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে Grab, Go jek, ইন্ডিয়া তে Ola Cabs, চায়না তে Didi Chuxing, অস্ট্রেলিয়া তে Hitch-a-ride, ব্রাজিল এ EasyTaxi ইত্যাদি। তাই যে দেশে যাচ্ছেন সেখানে কোনটা চলে যেনে যাবেন আর অ্যাপ আগে থেকে নামিয়ে নিবেন।

থাকার জায়গা খোঁজার অ্যাপ

Booking.com , Hostelworld, Airbnb, Couchsurfing  এই কয়টা অ্যাপ নামিয়ে নিলে আপনি সহজে থাকার জায়গা খুঁজতে পারবেন , বুকিং ম্যানেজ করতে পারবেন। বার বার ওয়েবসাইট এ গিয়ে হোটেল খোঁজা যথেষ্ট ঝামেলার, অ্যাপে অনেক সহজ। থাকার জায়গা নিয়ে বিস্তারিত জানতে “ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন?” আর্টিকেল টি পড়ুন।

কমিউনিকেশন এবং মেসেঞ্জিং অ্যাপ

এখন অনলাইনে যোগাযোগ করার অনেক মাধ্যম হয়ে গেছে। দেশের বাইরে গিয়ে বা দেশে থেকেই বন্ধু-বান্ধব, পরিবার এমনকি নতুন বন্ধু বানাতে অ্যাপ গুলো বেশ কাজের। সবার সাথে ম্যাসেজ, ভয়েস, ভিডিও , ছবি এমনকি আপনি কোথায় আছেন এসব তথ্য আর কুশল বিনিময়ে বেশ কাজে দেয়। Skype, Viber, Whatsapp, Telegram, Facebook Messenger, Imo, Line, WeChat, Telegram হল জনপ্রিয় কিছু কমিউনিকেশন অ্যাপ।

স্কাইপি আমার বেশ কাজে দেয়, স্কাইপির সবচেয়ে ভাল ফিচার হল ক্রেডিট কিনে ইন্টারনেট থেকে সরাসরি ফোনে কল দেয়া যায়। আমি দেশে সবার সাথে কানেক্টেড থাকার জন্য ব্যাবহার করি, কারণ সবাই সবসময় অনলাইন থাকে না। তাই জরুরি কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে এটি বেশ কাজের। আর বেশ সস্তা ও, বাংলাদেশে কল করতে প্রতি মিনিট ১.৫ টাকা।

এই অ্যাপ গুলোর মধ্যে Whatsapp আর Facebook Messenger সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তারপরেও দেশ ভেদে কিছু অ্যাপ জনপ্রিয়, যেমন চায়নাতে WeChat, জাপানে Line, ইরান, রাশিয়া তে Telegram, মিডল ইস্টের দেশগুলোতে Imo, ইস্ট ইউরোপের দেশগুলোতে Viber বেশি চলে। মোটামুটি এই কয়টা অ্যাপ আপনি ইনস্টল করে রাখলে অনেক সুবিধা হবে। দেখা গেল ঘুরতে গিয়ে আপনার একজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল, আর সে এমন একটা অ্যাপ ব্যাবহার করে যা আপনার কাছে নাই। তাই এসব অ্যাপে একাউন্ট খুলে রাখা ভাল , এতে করে আপনি বিশ্বব্যাপী আপনার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন। সাথে সাথে না হলেও একদিন এইসব নেটওয়ার্ক থেকে অনেক উপকার পাবেন।

ফ্লাইট সার্চ ইঞ্জিন

ফোনে ফ্লাইট সার্চ ইঞ্জিন অ্যাপ ইনস্টল রাখা বেশ কাজের, ট্যুর প্ল্যান করার ক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। Skyscanner, Wego, Kayak আরও অনেক আছে, তবে আমি এই কয়টা ব্যবহার করি । অনেক সময় বিভিন্ন  জায়গার বাস ট্রেনের চেয়ে এয়ার টিকেট কম দামে পাওয়া যায়, ইনস্ট্যান্ট এয়ার ফেয়ার জানতে এসব অ্যাপ বেশ কাজের। এসব অ্যাপ কিভাবে কাজ করে জানতে “কিভাবে সস্তা এয়ার টিকেট খুঁজে বের করবেন?” আর্টিকেল টি পড়তে পারেন।

ট্র্যাভেল ফোরাম

ভ্রমণে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বা টিপস,ট্রিক্স জানতে এসব অ্যাপ বেশ কাজে দেয়। Trip Advisor, Google Trips আমি ব্যবহার করি, এর মধ্যে আমি Trip Advisor বেশি ব্যবহার করি। বিভিন্ন জায়গার রিভিউ জানার জন্য এটি বেশ কাজে দেয়, গিয়ে সময় নষ্ট হবে কিনা, বা কি কি জিনিষ জানা দরকার সব পাবেন এসব ফোরামে। পাশাপাশি আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে সেখানে করতে পারবেন।

 

ভিপিএন অ্যাপ

বিভিন্ন দেশে নির্দিষ্ট কিছু সাইট ব্লক থাকে, যেমন চায়নাতে গুগল, ফেসবুক ব্যান। এমন পরিস্থিতি তে ভিপিএন অ্যাপ আপনার বেশ কাজে দিবে। Hide.me, Hotspot Shield এই দুইটার যেকোনো একটা ব্যবহার করতে পারেন।

ট্রান্সলেটর অ্যাপ

অনেক  সময় নতুন দেশে বিভিন্ন সাইনবোর্ড বা কোন লেখা বুঝতে না পারলে বা কখনো বিপদে পরে লোকাল ভাষা ব্যবহার করার দরকার পড়লে আপনার ট্রান্সলেটর অ্যাপ বেশ কাজে দিবে। সেক্ষেত্রে Google Translate এর চেয়ে বেটার কিছু নাই।

আরও অনেক অ্যাপ হয়তো আছে, বেসিক সব অ্যাপ গুলো কভার করার চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলে। আর্টিকেল টি পরে আপনার কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। আর এর বাইরে কোন অ্যাপ আপনি ব্যবহার করলে কমেন্টে জানাবেন।

Facebook Comments