থাইল্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা

থাইল্যান্ড ট্যুরিস্ট ভিসা

Sharing is caring!

আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো থাইল্যান্ড এর ভিসার পুরো স্টেপ নিয়ে।

থাইল্যান্ডের ভিসা আপনি দুইভাবে করতে পারেন। নিজে অথবা এজেন্সি কে দিয়ে। যদি প্রথমবার ভিসা করান আর বয়স কম হয় তবে নিজে নিজে এপ্লাই করা উচিৎ। এজেন্সি কে দিয়ে প্রথমবার করালে না পাবার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হল একই কভার লেটার আর একই ট্র্যাভেল আইটিনারি দেয়া। ওরা সবার জন্য আলাদা আলাদা এসব বানায় না একই জিনিষ কপি পেস্ট করে। নিজে নিজে থাই ভিসা করা খুব ঝামেলার কাজ। যদি এজেন্সি কে দিয়েই করাতে চান তবে বলবো কভাল লেটার আর ট্র্যাভেল আইটিনারি টা নিজে বানিয়ে দিতে । নিজে এপ্লাই করতে গেলে খরচ বেশি এ পড়ে দিনশেষে। এজেন্সি ১-২০০ টাকা বেশি নেয় ভিসা ফি এর থেকে । আমি নিজে পরেরবার করলে সব পেপার রেডি করে কোন এজেন্সি কে দিয়েই করাবো।

 

Contents

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভিসার চেকলিস্ট আপনি ভিএফএস গ্লোবাল এর ওয়েবসাইট এ পাবেন।

  1. ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম পুরন করা এবং সই করা।
  2. পাসপোর্ট (৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।
  3. পাসপোর্টের বায়ো পেজের ফটোকপি, সাথে যদি আগের থাই ভিসা থাকে তার ফটোকপি।
  4. ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ( ৩.৫×৪.৫ সে.মি.)
  5. ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট। ব্যাংক এ মিনিমাম ৬০ হাজার থাকতে হবে, ফ্যামিলি হলে ১ লাখ ২০ হাজার। এইটা অফিশিয়াল রিকোয়ারমেন্ট , তবে এর বেশি রাখা ভাল। আর একাউন্টে রেগুলার ট্রানজেকশন থাকা ভাল।
  6. ভিসা কভার লেটার কোম্পানি প্যাডে প্রিন্ট করতে হবে যদি ব্যাবসা দেখান ( দেশে কি কাজ করেন এবং কেন ঘুরতে যেতে চান)
  7. ট্র্যাভেল আইটিনারি ( কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন এসবের বর্ণনা)
  8. হোটেল বুকিং ( বুকিং ডটকম থেকে করে নিতে পারবেন, যতদিন থাকবেন ততদিনের দেয়া ভাল)
  9. বিমান টিকেট বুকিং কপি ( কোন ট্র্যাভেল এজেন্ট থেকে নিতে হবে যদি নিজে জমা দেন)
  10. চাকরি করলে লিভ লেটার আর ব্যবসা বা সেলফ এমপ্লয়েড হলে ট্রেড লাইসেন্স বা জয়েন্ট স্টক রেজিস্ট্রেশন এর ট্রান্সলেট নোটারাইজড কপি সাথে অরিজিনাল এর ফটোকপি।
  11. ভিজিটিং কার্ড।
  12. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি।

পেশা যদি স্টুডেন্ট হয় তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে লিভ লেটার দিতে হবে আর অভিভাবকের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট দিতে হবে। সাথে আপনার অভিভাবক আপনার ট্যুরের খরচ দিচ্ছে এমন একটা লেটার দিতে হবে। সাথে অভিভাবকের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিতে হবে।

 

ভিসা ফি

সিঙ্গেল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসার জন্য ৩৭৪০ টাকা ভিসা ফি জমা দিতে হবে। যেদিন ভিসার পেপার জমা দিতে যাবেন সেখানেই ফি দিতে হবে। যদি এজেন্সি কে দিয়ে ভিসা করান তবে ৩৭৪০ এর উপর আরও সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বেশি দিতে হবে। এটা এজেন্সি ভেদে নির্ভর করে কে কত তে করে দেয়। অনেকে ১০০-২০০ টাকা বেশি নেয়।

 

কোথায় জমা দিবেন

 

গুলশান ভিএফএস এ গিয়ে জমা দিতে হবে সব পেপার। খুব সকাল সকাল চলে যাওয়া ভাল। সকাল ৭ টার মধ্যে সেখানে পৌঁছুলে সবচেয়ে ভাল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট জমা নেবার লিমিট  আছে। এজেন্ট আর ইন্ডিভিজুয়াল টুরিস্ট আলাদা কোটা আছে। ভিএফএস প্রতিদিন ৩০০ এপ্লিকেশন জমা নেয় তাদের ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের সেন্টার মিলে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময় টা খুব চাপ থাকে ভিসার।

সকাল এ গিয়ে সেখানে আপনাকে গেটের বাইরে লাইন দিয়ে দাড়াতে হবে এরপর সেদিনের জমা নেবার লিমিট হিসাবে ভিতরে ঢুকতে দিবে। ভিএফএস এর মেইন গেইটে আপনার সিকিউরিটি চেক হবে। যদি আপনার সাথে কোন ব্যাগ থাকে তবে তা বাইরে লকারে রেখে যেতে হবে, লকার ফ্রি। শুধু পাসপোর্ট আর ফাইল নিয়ে ভিতরে ঢুকতে পারবেন। গেইটে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে কয়টা পাসপোর্ট আর এজেন্ট না পার্সোনাল। এরপর আপনাকে একটা টোকেন দিবে । এর পর সেই টোকেন নিয়ে আপনাকে ভিতরে গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। আপনার টোকেন নম্বর কল করলে আপনি ফাইল আর পাসপোর্ট নিয়ে কাউন্টারে যাবেন। তারা সব ডকুমেন্ট চেক করে আপনাকে একটা মানি রিসিট দিবে। আপনি সেই মানি রিসিট নিয়ে টাকা দেবার কাউন্টারে গিয়ে টাকা জমা দিবেন। টাকা জমা দিয়ে আবার সেই কাউন্টারে গিয়ে রিসিট দিলে তারা আপনাকে পাসপোর্ট কালেক্টের একটা স্লিপ দিবে। এরপর আপনার কাজ শেষ।

 

 

ভিসা সেন্টারের লোকেশন নীচে দেয়া হল

জমা দেবার পর

পাসপোর্ট জমা দেবার পর ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। নিজে সাবমিট করলে দ্রুত পাবেন। এজেন্ট রা অনেক সময় গ্রুপ ভিসা করে যে কারণে সময় আরও বেশি লাগে। এই ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনাকে এমব্যাসি থেকে কল দিবে। কল দেবার কারণ হল ভেরিফাই করা আপনি ভিসা জমা দিয়েছেন কিনা? কেন যাবেন? দেশে কি করেন? এসব জিজ্ঞেস করবে। অনেকটা ভিসা ইন্টারভিউ বলা যায়। প্রথমবার ভিসার ক্ষেত্রেই তারা কল দেয়। একটা ভিসা থাকলে কল দেয়া খুব রেয়ার কেস। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার ভিসা ফাইলে দেয়া তথ্য আর আপনার উত্তর মিলতে হবে। আপনি কভার লেটারে লিখেছেন যে যাবেন ১২ তারিখ আর থাকবেন ১০ দিন । আর ফোনে বললেন থাকবেন ১৫ দিন যাবেন ১০ তারিখ তবে সমস্যা। তাই আপনি কোথায় ঘুরবেন কি করবেন আর কখন যাবেন এসব সম্পর্কে ধারনা রাখবেন। তারা আপনাকে আপনার প্রফেশন নিয়েও অনেক প্রশ্ন করতে পারে। আমাকে তারা ৫ মিনিতে ২০ টা মত প্রশ্ন করেছিল।

আপনার এপ্লিকেশন স্ট্যাটাস কি তা ভিএফএস এর ওয়েবসাইট এ গিয়ে চেক করতে পারবেন। এমব্যাসি থেকে কল পাবার পর রোজ একবার চেক করবেন। আমি জমা দিয়েছিলাম ২১ তারিখ, আমাকে কল দেয় ২৬ তারিখ । এরপর ২৭ তারিখে  অনলাইন এ চেক করে দেখি পাসপোর্ট ভিএফএস সেন্টারে চলে এসেছে। যেখানে ভিসার জন্য জমা দিয়েছিলাম সেখানেই গিয়ে পাসপোর্ট কালেক্ট করতে হবে। আপনি যদি নিজে কোন কারণে যেতে না পারেন তবে একটা অথরাইজড লেটার সহ রিসিভ স্লিপ দিয়ে  কাউকে পাঠালেও হবে। এক্ষেত্রে যাকে পাঠাবেন তার সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ,  অথরাইজড লেটার আর রিসিভ স্লিপ থাকলেই হবে।

ভিসা পাবার পর

থাইল্যান্ড ৩ মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করে। এই তিনমাস হল আপনার থাইল্যান্ডে ঢোকার জন্য নির্ধারিত সময়। এই তিনমাসের মধ্যে যেদিন ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিন বা ২ মাস থাকার অনুমতি পাবেন। এখন ধরা যাক আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২২ তারিখ, আপনি ২০ তারিখে থাইল্যান্ডে ঢুকলেও ৬০ দিন থাকার অনুমতি পাবেন।

থাই রি এন্ট্রি ভিসা

আপনি যেদিন থাইল্যান্ডে ঢুকবেন সেদিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আবার যদি থাইল্যান্ডে আসতে চান তবে থাইল্যান্ডের রি-এন্ট্রি ভিসা নিতে পারেন। অনেকেই থাইল্যান্ড থেকে পাশের দেশ ক্যাম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ঘুরতে যেতে চায়। থাইল্যান্ড থেকে পাশের দেশগুলোর রিটার্ন টিকেট অনেক সস্তায় মিলে যে কারণে এই ভিসা বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আপনি চাইলে একই সময়ের মধ্যে আবার বাংলাদেশ থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। এটি আপনি এয়ারপোর্ট থেকে নিতে পারবেন। সিঙ্গেল এন্ট্রির জন্য ১২০০ বাথ লাগে আর মাল্টিপল এন্ট্রির জন্য ৩০০০ বাথ। ব্যাংকক এর ডন মুয়েনাং এবং সুবর্ণভূমি দুই এয়ারপোর্ট থেকেই এই ভিসা নিতে পারবেন। ডন মুয়েনাং এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন শেষ করে ভিতরেই এই ভিসা নেবার কাউন্টার আছে আর সুবর্ণভূমিতে ইমিগ্রশন এর আগেই কাউন্টার টি পাবেন। যদি কনফিউশন লাগে তবে প্রথমেই এয়ারপোর্টে দায়িত্বরত কোন পুলিশ কে জিজ্ঞেস করলেই আপনাকে বলে দিবে কাউন্টার টি কোথায়।

রি এন্ট্রির জন্য এক কপি ছবি আর পাসপোর্ট থাকলেই হবে। বাকি সব ওরা করে দিবে। আপনার পাসপোর্টে একটা সিল দিয়ে দিবে তাতে লেখা থাকবে কতদিন মেয়াদ।

স্যাম্পল লেটার সমূহ

Facebook Comments