অন্নপূর্ণা বেজ ক্যাম্প ট্রেক পঞ্চম দিন

অন্নপূর্ণা বেজ ক্যাম্প ট্রেক পঞ্চম দিন

Sharing is caring!

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮


আপার সিনুয়া থেকে দেওরালি


আপার সিনুয়া জায়গাটা খুব উপরে না, ২৩০০ মিটার মত। তারপরেও বেশ ঠান্ডা ছিল, একদম জানুয়ারীর শীতের সকালের মত একটা ফিল। আজকে প্ল্যান হল দেওরালি পর্যন্ত যাওয়া, হিমালয়া গ্রাম টা তেও থাকতে পারি। আগের দিন পরিচয় হল “কু” এর সাথে, ওর পুরা নাম অনেক কঠিন। ওর মত কেয়ারিং মানুষ জিবনে খুব কম দেখেছি আমি। কোরিয়ানরা অনেক সহজসরল, প্যাচ কম৷ যে কজনের সাথে দেখা হইসে তাদের দেখে মনে হইসে এমন।


আরেকটা হল হোসে আগুস্তিন মলার রদ্রিগেজ, ছোট করে গুস। এতদিন উচ্চারণ করতাম চিলি, সে কইলো ভাই ইটস নট চিলি ইটস চিলে। জব ছেড়ে ছুড়ে বছর খানেক ধরে ঘুরতেসে। সুপারফাস্ট, আমাদের অর্ধেক সময়ে ট্রেক শেষ করে। ওর জন্য কিছু সুবিধা হইসে সে আমাদের জন্য লজ ঠিক করে রাখতো।


সকাল বেলা সূর্য উঠা দেখতে দেখতে স্যুপি নুডুলস খেয়ে রওনা দিলাম দেওরালির উদ্দেশ্যে৷ আজকের পুরো রাস্তাটা মেঘের মধ্যে দিয়ে ছিল। যতই দিন যাচ্ছে ততই সুন্দর জায়গা দেখছি। অন্নপূর্ণা এত সুন্দর হবে কল্পনাতে ভাবিনাই।


পথে একটা বোকার মত কাজ করেছি, দেওরালি পৌছানোর একটু আগেই একটা জায়গাতে পাহাড় ধসে আছে। বরফে সব বড় বড় পাথর গেথে আছে, আর বরফ গলছে। যে কোন সময় সেগুলো ধসতে পারে। আমি সেখানে দাড়িয়ে ছবি তুলসি মেলাগুলা। পরে দেওরালি গিয়ে জানতে পারি গতমাসে এক ট্যুরিস্ট ছবি তুলতে গিয়ে এরকম দাড়ায় ছিল, পাহাড় ধসে লাশ পাওয়া যায়নি। শুনেই গা ঠান্ডা হয়ে গেল একরকম। এদিকে দেওরালি পৌঁছে কু কে খুঁজে পাচ্ছিনা, তার আমার আগে পৌছানোর কথা কিন্তু সে নাই দেওরালি তে। ভয় পেয়ে গেছিলাম একটুর জন্য, পরে খুঁজে পাইসি কোনমতে।


দেওরালি ঠিক দুপুরে পৌছে গেছি, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এগ ভেজ ফ্রাইড রাইস অর্ডার করলাম। খেতে বসে ঠিক করলাম কাল এবিসি যাব না এমবিসি। আর চার ঘন্টা মত হাঁটলে এবিসি যেতে পারবো। এখন যেখানে আছি সেটা ৩১০০ মিটার এরপর দু ঘন্টা হাঁটলে মাচ্চাপুচ্চারে বেজ ক্যাম্প সেটা ৩৭০০ মিটার মত এরপর অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ৪১৩০ মিটার। এবার ৩০০০ এর পর ৫০০ মিটার পার ডে এর বেশি এলিভেশন গেইন করা উচিৎ না। এল্টিটিউড সিকনেস নিয়ে একটু চিন্তিত হলাম। পরে ঠিক করলাম এমবিসি গিয়ে একটা লম্বা সময় রেস্ট নিয়ে এবিসি যাব। যা হয় দেখা যাবে। আমি রাতে সিকনেস পিল একটা খেয়ে নিসিলাম প্রিকশন হিসাবে।


এখন এবিসি অনেক বিজি জায়গা লজ পাওয়া কঠিন। আমাদের বললো কল করে বুকিং দিতে হবে। কল দিতে ১০০ রুপি লাগবে। এখন কে দিবে এই ১০০ রুপি ঠিক করতে কার্ড খেলা হবে। শিটহেড, এখন যে এই খেলাতে শিটহেড হবে তাকে পে করতে হবে৷ আমার কপালেই ছিল শিটহেড হওয়া।
এতদিনের হেঁটে আসা স্বার্থক, কালকে এবিসি যাব ভেবে সেই থ্রিল হচ্ছিল আবার মন খারাপ ও হচ্ছিল লক্ষ্য অর্জন করে ফেলছি বলে। এরপর সব শেষ, ফিরে যাওয়া, ট্যুর শেষ। একরকম ৫০/৫০ সিচুয়েশন৷

Facebook Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *