অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেক ষষ্ঠ দিন পার্ট-১

অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প ট্রেক ষষ্ঠ দিন পার্ট-১

Sharing is caring!

১ অক্টোবর, ২০১৮


দেউরালি থেকে মাচাপুচারে বেজক্যাম্প


দেওরালি তে আমাদের রুম পাবার কথা ছিল না। সিজন শুরতেই অনেক ভিড় সিজনে কি হয় কে যানে৷ গুস আগে এসে একটা রুম পেয়েছে কিন্তু একজন কে বাইরে ডাইনিং এ ঘুমাতে হবে৷ পরে রুমের ব্যাবস্থা হয়েছিল। দেউরালি তে এই অবস্থা দেখে অন্নপূর্ণা তে বুক দিয়ে ফেললাম রুম। এরপর লাঞ্চ শেষকরে আড্ডা দিচ্ছি।


একটু পর বের হয়ে দেখি জেইমির বাইরে৷ জেইমি সেই কোরিয়ান ছেলেটা যার সাথে তৃতীয়দিন গোরেপানিতে দেখা হয়েছিল। জেইমির ভিজিটিং কার্ড টা বেশ ইউনিক ছিল। সেটাতে সে একটা অপশন রেখেছে, তার সাথে যদি কারো তিনবার দেখা হয় তবে সে তাকে কফি/বিয়ার খাওয়াবে৷ কমিউনিকেশন ডেভেলপ করার ইউনিক আইডিয়া। জেইমির আচরন একটু উইয়ার্ড টাইপ, কে পপ কি তেমন ধারনা নাই। পরে একটু ইউটিউবে কেপপের পোলাপাইনের বিহেভ দেখে বুঝলাম কোরিয়ান পোলাপাইন এমন বিহেভ করে। হাই বলা বা হাসি সব দেখি কেপপ আর্টিস্ট দের মত। জেইমি কে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলাম যেন অনেকদিনের পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা৷ পাহাড়ে অনেক অল্প সময়ে বন্ধুত্ব গাড় হয়ে যায়৷


সকালে শুধু চা খেয়ে রওনা দিলাম মাচাপুচারের উদ্দেশ্যে৷ প্ল্যান হল সেখানে গিয়ে নাস্তা করবো৷ খুব বেশি দুরে না, মাত্র ২ ঘন্টা হাঁটতে হবে৷ মাচাপুচারে বেজক্যাম্পের এলিভেশন ৩৭০০ মিটার। প্রায় ৬০০ মিটার মত উপরে যেতে হবে। শুরুতেই দেখি একটা সাইন এভেল্যাঞ্চ রিস্ক এরিয়া, তবে তেমন কিছু দেখিনি হয়তো মুনসুন সিজনে হয় এমন।


কিছুটা পথ হাঁটার পর বড় বড় পাহাড়ের মাঝে বিশাল সমতল জায়গা। পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ছে অদ্ভুত এক রুপ নিয়েছে চারপাশ৷ পথের পাশে নাম না জানা অনেক ফুল৷ কেন জানি সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।


আজকে খুব তাড়া নেই তাই খুব ধিরে ধিরে এগুচ্ছি আর চারপাশের সৌন্দর্য দুচোখে গিলছি। পথে হটাৎ সেই কানাডিয়ান ভদ্রলোকের সাথে দেখা যার সাথে তাদাপানিতে দেখা হয়েছিল৷ আমি একটু কনফিউজড ছিল। সেই দেখি আমারে ডাক দিল হেই সাজেদ ব্যাংলাদেশ! আমি একটু খুশি হলাম ক্ষনিকের আড্ডায় সে আমাকে মনে রেখেছে। তারপর কিছুক্ষণ গল্প করলাম, সে বললো খুব সুন্দর জায়গা যাও মজা পাবে।


ঠিক ২ ঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম মাচাপুচারে বেজক্যাম্পে। ১৫-২০ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর বন্ধুদের খুঁজে পেলাম৷ তারা বসে খাবার অর্ডার করেছে কেবল। আমি ওদের মতই কোরিয়ান রামেন অর্ডার করলাম। এখনো জিভে সেই স্বাদ লেগে আছে। বেলা ১১ টা বাজে রেস্টুরেন্টে বসে মাচাপুচারের চুড়া পরিষ্কার দেখা যায়। এখানে মেঘ হাত দিয়ে ছোয়া যায়।


খেতে বসে পরিচয় হল চাইনিজ এক ছেলের সাথে ওর নাম কুক। পেচাল টা লাগলো টিমে অলরেডি একটা কু আছে এখন আরেকটা জুটলো যার নাম কুক। পরে আমরা ওরে কুকি বলে ডাকা শুরু করলাম। ঠিক করলাম লাঞ্চ শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেব তারপর রওনা দিব অন্নপূর্ণার উদ্দেশ্য।


আর মাত্র ২ ঘন্টা এরপর ই গন্তব্য, এতদিনের কষ্ট সার্থক হবে একটু পরই ভাবতেই অন্যরকম থ্রিল হচ্ছে

Facebook Comments