কানাডার ভিসা এপ্লিকেশন

কানাডার ভিসা এপ্লিকেশন

Sharing is caring!

Contents

কানাডার ভিসা এপ্লিকেশন

আমেরিকার ভিসা এপ্রুভের পর পর আমি আর আমার ওয়াইফ কানাডার ভিসা এপ্লিকেশন করে ফেলি। কানাডা পাসপোর্ট এর মেয়াদ পর্যন্ত ভিসা ইস্যু করে বলে এপ্লাই করেছি। কখন যাব তার ঠিক নাই। এর মধ্যে আবার শুনেছিলাম দুইজন একসাথে এপ্লাই করলে যার পাসপোর্ট এ মেয়াদ কম তার অনুযায়ী দুজন কে ভিসা দেয়। আমার রিনিউ করা পাসপোর্ট ১০ বছর মেয়াদ ছিল আর আমার ওয়াইফ এর পুরাতন পাসপোর্ট ২ বছর মেয়াদ ছিল। এখন রিনিউ করবো কিনা এক দ্বিধায় ছিলাম কারণ পুরাতন পাসপোর্ট এ US ভিসা এখন নতুন পাসপোর্ট দিয়ে এপ্লাই করলে সেটা CAN+ ক্যাটাগরি তে না পড়লে ভিসা প্রসেস এ অনেক সময় লাগবে। তারপরেও রিস্ক নিয়ে বউয়ের পাসর্পোট ১০ বছরের জন্য রিনিও করে অ্যাপ্লাই করে দেই। ১ মার্চ বায়োমেট্রিক দেবার পরে ২১ মার্চ ভিসা এপ্রুভ হয়, ২২ মার্চ পাসপোর্ট জমা দিয়ে ৩০ মার্চ পাসর্পোট কালেক্ট করলাম, দুজন কে ভিসা যার যার পাসপোর্ট এর মেয়াদ অনুসারে ভিসা দিয়েছে। এপ্লিকেশন করার সময় ও মনে হয়েছিল কানাডার ভিসা আলাদা আলাদা ভাবে প্রসেস হয়। আমরা গ্রুপ অ্যাপ্লাই করেছিলাম তারপরেও দুজনের এপ্লিকেশন আপডেট একটু আগে পরে হয়েছে। তাই যারা গ্রুপ অ্যাপ্লাই করবেন তাদের জন্য সাজেশন হল ডকুমেন্ট দুজনের ক্ষেত্রে সেম আপলোড করা স্পেশালি ফান্ড ডিটেইলস। আমরা অনেক সময় মনে করি দুইজন একসাথে আবেদন করছি তাই একটা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জমা দিলেই হবে। এমন করলে পরে সমস্যা হতে পরে।

আমার এই পর্যন্ত এপ্লাই করা সবচেয়ে ভেজাল এপ্লিকেশন প্রসেস আমি বলবো। ইউএসএ বা ইউকের মতই অনলাইন এ এপ্লিকেশন সাবমিট করতে হয়। ইউকের সাথে বেশ মিল আছে তবে স্ট্রেইট প্রশ্ন না করে অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রশ্ন করে। যেমন একটা এক্সাম্পল দেই। প্রথমে প্রশ্ন করে আপনার সিটিজেনশিপ কি, এরপর কয়েক স্টেপ পরে জিজ্ঞেস করে জন্ম কোথায় তারপর আবার জিজ্ঞেস করে যেখানে জন্ম সেখানের সিটিজেনশিপ কতদিনের। এই প্রশ্ন টা হয়ত কিছু মানুষের জন্য ঠিক আছে কিন্তু সবার ক্ষেত্রে না আর আমি যাব ঘুরতে সেখানে এত কমপ্লেক্স প্রশ্নের দরকার ই দেখি না। এরপর আসে ট্র্যাভেল হিস্টোরি এড করা, আমার সবগুলো ট্র্যাভেল হিস্টোরি এড করতে ২ দিন সময় লেগেছে। সব ফিল আপ করে নেক্সট স্টেপে যাব দেখি এরর, যা সাবমিট করলাম আধাঘণ্টা ধরে সব জলে।

আর সবচেয়ে কঠিন কাজ হল ২ মেগাবাইটের মধ্যে সব ডকুমেন্ট দেয়া। ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দিতেই তো এর থেকে বেশি জায়গা লাগে। শেষে আমি ব্যাঙ্কের থেকে সল্ভেন্সি সার্টিফিকেট নিয়ে সেটা + ই স্টেটমেন্ট সাবমিট করি।

এইবার আসি এপ্লিকেশন প্রোসেসে

কানাডার ভিসা দুইভাবে আবেদন করা যায়, IRCC যেটা অনলাইন বেজ্ড এবং GCkey যেটা পেপার বেজ্ড। আমি IRCC তে এপ্লাই করেছি, GCKEY এর ব্যাপারে বলতে পারি না।

স্টেপ ১- IRCC রেজিস্ট্রেশনঃ প্রথমে IRCC পোর্টালে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন আপনার ইমেইল আইডি দিয়ে। এরপর ভিসা এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করবেন।

IRCC Portal Link: https://www.canada.ca/en/immigration-refugees-citizenship/services/visit-canada/apply-visitor-visa.html

স্টেপ ২– ভিসা ফর্ম ফিল-আপঃ কিভাবে এপ্লিকেশন ফর্ম ফিল-আপ করবেন তার জন্য এই ভিডিও টা দেখতে পারেন। এইটা একবার দেখে আইডিয়া নিয়ে সব ডকুমেন্ট রেডি করে তারপর এপ্লাই করতে বসলে সময় কম লাগবে।

ভিসা ফর্ম ফিল-আপ করার লিঙ্কঃ https://youtu.be/BTQfOtAJ2-4

স্টেপ ৩ঃ সাপোর্টিং ডকুমেন্ট (ম্যান্ডাটরি) – এইটা আপনার ফর্ম ফিল আপ করার সময় প্রশ্নের উত্তরের উপর নির্ভর করে চাইবে। আমি যা যা দিয়েছিলাম তার ডিটেইলস দিলাম।

  • পাসপোর্ট ( আমার ৩ টা পাসপোর্ট সবগুলোর স্ট্যাম্প ও ভিসা আছে এমন সব পেজ স্ক্যান করে ২ মেগাবাইট এর মধ্যে একটা ফাইল এ দিয়েছিলাম)
  • ন্যাশনাল আইডি ( ন্যাশনাল আইডির স্ক্যান কপি)
  • ম্যারেজ সার্টিফিকেট ( ম্যারিড দিলে এইটা ম্যান্ডাটরি, আমি নোটারাইজ করা ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি দিয়েছিলাম)
  • Use of representative IMM5476 ( গুগলে imm5476e ফর্ম লিখে সার্চ দিলে একটা পিডিএফ আসবে সেটা ফিল-আপ করে প্রিন্ট দিয়ে সিগনেচার করে স্ক্যান কপি দিতে হবে। এইটা যদি আপনার এপ্লিকেশন অন্য কেউ সাবমিট করে সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন আমি আমার ওয়াইফ এর টা এক প্রোফাইল থেকে করেছিলাম তার সাপোর্টিং ডকুমেন্ট এ এইটা দিতে হয়েছিল, এইটা একধরনের কনসেন্ট ফর্ম যে আমার ওয়াইফ এর ভিসা আমি প্রোসেস করছি এবং তার কোন আপত্তি নেই)
  • U.S. non-immigrant visa ( যদি ভ্যালিড US Visa থাকে তাহলে শুরুতেই ভিসা ডিটেইলস দিতে হয় এবং পরে ভিসার স্ক্যান কপি আপলোড করতে হয়। US Visa থাকলে বা ১০ বছরের মধ্যে কানাডার কোন ভিসা থাকলে CAN+ ক্যাটাগরি তে ভিসা প্রোসেস হয়, যেটাতে সময় ২-৩ সপ্তাহ লাগে)

স্টেপ ৪- অপশনাল ডকুমেন্টঃ আপনি চাইলে দিতে পারেন নইলে না। আমি যা দিয়েছি তার ডিটেইলস দিলাম

  • Consent personal information– এইখানে আমি কিছু দেই নি।
  • Employer letter (current)- ( এইখানে জব বা ওয়ার্ক রিলেটেড দিতে পারেন, এই ফিল্ড টা যারা কানাডার জব অফার পেয়ে স্কিল মাইগ্রেশন এ যাচ্ছে তাদের জন্য। তবে আমি এইখানে Visa Cover Letter, Travel Itinerary, Hotel Booking, Trade License, Tin & Tax Acknowledgment সবগুলো 2 MB একটা ফাইল এ দিয়েছিলাম যেহেতু অন্য কোথাও এসব ডকুমেন্ট দেবার জায়গা ছিল না। কেউ জব করলে NOC, Salary Certificate এইসব দিতে পারেন)
  • Additional documents ( এইখানে আমি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট, FDR, সঞ্চয়পত্র এইসব দিয়েছিলাম একটা ফাইল এ। আমার ওয়াইফ এর ক্ষেত্রে শুরুতে একটা স্পন্সর লেটার দিয়েছিলাম যে আমি তার ট্যুর স্পন্সর করছি)

স্টেপ ৫- ভিসা ফি পেমেন্টঃ ফর্ম ফিল আপ এবং ডকুমেন্ট আপলোড করার পরে ভিসা ফি পেমেন্ট এর অপশন পাবেন। কানাডার ভিসা ফি ১০০ কানাডিয়ান ডলার আর বায়োমেট্রিক ফি ছিল ৮৫ কানাডিয়ান ডলার। সবমিলে ১৫,৫০০ মত খরচ পড়ে, আমাদের দুজনের ৩১০০০ মত খরচ পড়ে। এইবাদে আর এক পয়সা কোথাও দিতে হবে না। ভিসা ফি দেবার জন্য আপনার ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড লাগবে। ডলার রেট এর উপর করে ১৮৫ কানাডিয়ান ডলারে যা আসে সেটা পেমেন্ট করতে হবে।

স্টেপ ৬- এপয়েন্টমেন্ট শিডিউলঃ  ভিসা ফি পেমেন্ট এর পর আপনি Confirmation of Online Application Transmission, Submission Confirmation, Client Application Summary, Biometrics Collection Letter এই চারটা ডকুমেন্ট পোর্টালে রিসিভ করবেন। যখন Biometrics Collection Letter টা পাবেন তখন VFS এর ওয়েবসাইট এ গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বায়োমেট্রিক রেফারেন্স নম্বর দিয়ে এপয়েন্টমেন্ট শিডিউল করতে হবে। এরপর যেদিন এপয়েন্টমেন্ট নিবেন সেদিন গিয়ে ছবি আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আসলে আপনার এপ্লিকেশন কমপ্লিট হবে এবং তারপর তারা ভিসা প্রোসেস করা শুরু করবে।

VFS Link: https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/can/book-an-appointment

স্টেপ ৭- বায়োমেট্রিক দেয়াঃ এইদিন আপনার ছবি তুলবে এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিবে। সময় অনুযায়ী ১৫ মিনিট আগে VFS এ গেলেই হবে। সাথে আপনার পাসপোর্ট, বায়োমেট্রিক কালেকশন লেটার, পাসপোর্ট এর ফ্রন্ট পেজের ফটোকপি, ২ কপি কনসেন্ট ফর্ম নিয়ে যাবেন। বায়োমেন্ট্রিক দেয়া হয়ে গেলে আপনার এপ্লিকেশন প্রোসেস কমপ্লিট হবে। এরপর অপেক্ষা

স্টেপ ৮- প্রোসেসিং পিরিয়ডঃ ভিসা যদি CAN+ ক্যাটাগরি তে প্রোসেস হয় তাহলে সাধারণত সাবমিট করার ১-২ সপ্তাহ পরে রিভিউ তে যায়। IRCC পোর্টালে লগইন করে দেখতে পাবেন। রিভিউ তে যাবার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এপ্লিকেশন এপ্রুভ হয়। আমি বায়োমেট্রিক দিয়েছিলাম ১ মার্চ, এপ্লিকেশন রিভিউ তে যায় ৭ মার্চ এবং ২১ মার্চ এপ্লিকেশন এপ্রুভ হয়। এপ্লিকেশন এপ্রুভ হলে Biometric Validity Letter এবং Original Passport Request দুইটা পিডিএফ আপনার প্রোফাইল এ আসবে। পাসপোর্ট রিকুয়েস্ট আসা মানে ভিসা হয়ে গেছে।

স্টেপ ৯- পাসপোর্ট জমা দেয়াঃ Original Passport Request এই ফাইল টা পেলে আপনি এইটা প্রিন্ট করে সাথে বায়োমেট্রিক ভ্যালিডিটি লেটার, পাসপোর্ট ফ্রন্ট পেজের ফটোকপি, ২ সেট কনসেন্ট ফর্ম এবং পাসপোর্ট নিয়ে VFS এ যেকোনো দিন জমা দিবেন। যদি আপনি প্রথমবার কানাডার ভিসা এপ্লাই করেন তাহলে কোন ফি দিতে হবে না। তবে গত ১০ বছরের মধ্যে বায়োমেট্রিক দেয়া থাকলে আপনাকে ১৭ কানাডিয়ান ডলার বা ১৩০০ টাকা মত প্যাকেজ ট্রান্সমিশন ফি দিতে হবে।

স্টেপ ১০- পাসপোর্ট কালেকশনঃ পাসপোর্ট জমা দেবার ২ সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। পাসপোর্ট কালেকশন এর জন্য VFS এর রিসিট টা নিয়ে গেলেই হবে। আর যদি কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে থাকেন তাহলে বাসায় দিয়ে যাবে। আমি ২২ মার্চ পাসপোর্ট জমা দেই, ২৯ মার্চ আমার পাসপোর্ট রেডি ফর কালেকশন মেইল আসে, ৩০ মার্চ কালেক্ট করি। বাংলাদেশের ভিসা সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে ইস্যু হয়। তবে IRCC অফিস ম্যানিলা তে। আপনার পাসপোর্ট সিঙ্গাপুর হয়ে ম্যানিলা যাবে সেখানে স্টিকার লাগানোর পরে আবার সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকা ফিরবে। যেটা আমি আমার এপ্লিকেশন ট্র্যাক করার সময় দেখেছি।

এইবার যারা নতুন এপ্লাই করবেন তাদের জন্য কিছু টিপস

১। ফর্ম ফিল আপের সময় ট্র্যাভেল হিস্টোরি জানতে চায়। সেখানে আপনি গত ৫ বছরে কোন দেশে গিয়েছেন, কোন জায়গা বা সিটি ঘুরেছেন এসব দিতে হবে। ভিসা ফর্ম ফিল আপ করার আগে একটা এক্সেল ফাইল বা নোটবুকে লিখে রাখতে পারেন তাহলে সহজ হবে ফর্ম ফিল আপ করা। ফর্মে দেশের নাম, কোন প্লেস বা সিটি তে ঘুরেছেন, পারপাস, এবং ডেট জানতে চাইবে। ডেটের ক্ষেত্রে মাস আর বছর জানতে চায়, আর এক দেশে মাল্টিপল টাইম যাওয়া থাকলে সেটা মাল্টিপল টাইম দিতে পারবেন। যেমন আমি ৫ বছরে ইন্ডিয়া ৩ বার গিয়েছি তিনবার ইন্ডিয়ার এন্ট্রি দিয়েছি। আমি যেভাবে নোট করে রেখেছিলাম এন্টি এক্সিট সিল দেখে সেটা বলি From 2019-10, To 2019-10, Country/territory: Switzerland, Location: Bern,Zurich, Geneva,Zermatt, Thun,Fribourg, Purpose of travel: Sightseeing Tourism। আমার ৩২ টা দেশের ট্র্যাভেল হিস্টোরি এড করতে ২ দিন সময় লেগেছে। ওদের ওয়েবসাইট এ সমস্যা আছে, সব এড করে সাবমিট করলে এরর দেখায়। তাই কোথাও এইসব লিখে রাখা ভাল নইলে পাসপোর্ট এর পেজ খুলে খুলে বার বার দেখে বের করতে হবে।

২। আমি CAN+ এ এপ্লাই করি। যদি করো ভ্যালিড US ভিসা বা বিগত ১০ বছরে কানাডিয়ান কোন ভিসা থাকে তাদের জন্য প্রযোজ্য। CAN+ এর বিশেষত্ব হল আপনার এপ্লিকেশন দ্রুত প্রোসেস হবে আর ডকুমেন্ট তেমন দেয়া লাগে না। যেমন এখন নরমাল এপ্লিকেশন এর প্রসেসিং টাইম ৮-৯ মাস মত সেখানে CAN+ এ ২ সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি রেজাল্ট চলে আসে। আমি মার্চের ১ তারিখে বায়োমেট্রিক দেই আর পাসপোর্ট রিকুয়েস্ট লেটার আসে ২১ তারিখে।

৩। এইবার VFS এর বাটপারি- যেদিন বায়োমেট্রিক দিতে যাবেন সেদিন আপনাকে ৫ মিনিট ধরে গল্প শোনাবে প্রিমিয়াম সার্ভিসের এবং এ ও বলবে এখন নিলে সেটা ৫২০০ আর না নিলে যেদিন পাসপোর্ট জমা দিবেন সেদিন ৪৭০০ দিতে হবে। আসলে পুরোটাই মিথ্যা। প্রচুর মানুষ তাদের এই মিথ্যা ফাঁদে পা দিয়ে অযথা এই টাকা টা খরচ করে। এখন ডিফারেন্স কি ? ডিফারেন্স হল আপনাকে একটা সেপারেট রুমে বসাবে আর সফট ড্রিঙ্ক আর পানি হাতে ধরায়ে অপেক্ষা করতে বলবে। জেনারেল সার্ভিস নেয়া লোকজনের থেকে আপনার সময় কম লাগবে আবার চাপ কম থাকলে একই সময় লাগবে। খুব আর্লি মর্নিং যদি এপয়েন্টমেন্ট শিডিউল করতে পারেন তাহলে এইসবের কোন দরকার ই নাই। ১০ টার পরে আসলে চাপ বাড়ে।

৪। আরেকটা জিনিস জেনে রাখা ভাল আপনার বায়োমেট্রিক ফি পাসপোর্ট IRCC অফিসে পাঠানো থেকে নিয়ে আসা আর ছবি ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেবার খরচ কভার করে। একবার বায়োমেট্রিক দিলে সেটা ১০ বছরের জন্য ভ্যালিড। এখন কোন কারণে প্রথমবার আপনার ভিসা রিজেক্ট হলে পরে যদি আবার এপ্লাই করেন ১০ বছরের মধ্যে বা বায়োমেট্রিক না দেয়া লাগলে তখন ১৭ কানাডিয়ান ডলার বা ১২৭০ টাকা মত পাসপোর্ট পাঠানোর ফি দিতে হবে। আমিও এইটা নিয়ে কনফিউজড ছিলাম আর VFS কিছুটা মাইন্ড ট্রিক খেলে যে টাকা দেয়া লাগবে। তারা পাসপোর্ট জমা দেবার দিন ও এই প্রিমিয়াম সার্ভিসের গল্প শোনাবে, টাকা দিতে না চাইলে দরকার নাই, বলবেন জেনারেল সার্ভিস নিব। কানাডার ভিসা এপ্লিকেশন বেশিরভাগ পয়সাওয়ালারাই করে তাই অনেকের কাছে এই টাকা কিছু না, তারা এই সার্ভিস নিয়ে VFS এর চাকা সচল রাখবেন। তবে ভিড় এড়িয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমাকে সব কমপ্লিট করে ছেড়ে দিলে এইটাকা আমি দিতে রাজি ছিলাম।

৫। আমি ভিসা ফি ছাড়া কনসেন্ট ফর্ম ফটোকপি করার জন্য তাদের ২৪০ টাকা দিয়েছি। ৪ পেজের এই ফর্ম টা আপনি ডাউনলোড করে ফিল আপ করে নিয়ে যেতে পারেন এতে করে কিছুটা সময় বাঁচবে আর পয়সাও। ২ সেট করে কনসেন্ট ফর্ম লাগে বায়োমেট্রিক দেবার দিন আর পাসপোর্ট জমা দেবার দিন। আপনি এইটা নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে ২ কপি প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে পারেন।

https://assets.ctfassets.net/xxg4p8gt3sg6/2G0GtF7WPLvzToKOfompkv/c03d754f3eaf210cf115e35a9bfd096b/VFS-ConsentForm.pdf

৬। বায়োমেট্রিক দেবার পর IRCC প্রোফাইল চেক করতে পারেন সাধারণত এক সপ্তাহ পর রিভিউ তে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতে পারে। রিভিউ তে যাওয়া মানে আপনার ফাইল এ কাজ শুরু হয়েছে। আমার রিভিউ তে যাবার ২ সপ্তাহ পরে পাসপোর্ট সাবমিশন লেটার এসেছে।

৭। ভিসার এপ্লিকেশন সম্পর্কিত কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বা IRCC এর সাথে যোগাযোগ করার উপায় হচ্ছে IRCC Web Form এইখানে আপনার ডিটেইলস দিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

৮। পাসপোর্ট জমা দেবার পরে ৭-১০ দিনের মধ্যে রিটার্ন পাবেন, যদিও ওরা ২ সপ্তাহ বলে। নরমালি পাসপোর্ট চাওয়া মানে ভিসা এপ্রুভড বলা যায়। কতদিনের ভিসা পেলেন সেটা পাসপোর্ট হাতে পাবার ২-৩ দিন আগে জানার আর এপ্লিকেশন স্ট্যাটাস ট্র্যাক করার জন্য IRCC Application Status Tracker ওয়েবসাইট এ আপনার UCI নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে চেক করতে পারবেন। এই ডিটেইলস আপনার এপ্লিকেশন পোর্টালে পাবেন। এপ্লিকেশন ট্র্যাক করার ওয়েব লিঙ্কঃ

https://ircc-tracker-suivi.apps.cic.gc.ca/en/login

সব আপডেট ই আপনি ইমেইল এ পাবেন তারপরেও যদি ট্র্যাক করতে মন চায় তাহলে উপরের লিঙ্ক ইউজ করতে পারেন।

৯। কত টাকা দেখানো লাগে এইটা অনেকের প্রশ্ন তবে এর কোন সঠিক উত্তর নেই। তবে একটা বেসিক হিসাব হল কানাডার রিটার্ন এয়ার টিকেট ২ লাখ মত পড়ে কোন কোন সময় কম, ৭-১০ দিনের হোটেল ১ থেকে ১.৫ লাখ মত বাকি থাকে ঘুরাফিরা শপিং এইসব। সব মিলে মিনিমাম ৫ লাখ টাকা খরচ আসে ৭-১০ দিনের ট্যুরে। এখন আপনার ইনকাম যদি ইয়ারলি ১৫ লাখ+ না হয় তাহলে ৭-১০ দিনে ৫ লাখ খরচ করা জাস্টিফাই করা বেশ কঠিন অর্থাৎ আপনি বছরে যা ইনকাম করেন তার ৫০% টাকা একটা ট্যুরে খরচ করবেন এইটা এমব্যাসি পজিটিভলি নিবে না আমার মতে। তবে US ভিসা থাকলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট ম্যান্ডাটরি না, সেক্ষেত্রে স্কিপ করে যেতে পারেন।

এই ডিটেইলড আর্টিকেল পড়েও যারা বুঝতেসেন না তারা কোন এজেন্সির হেল্প নিতে পারেন। অনেক এজেন্সি ২০ হাজার চার্জ করে শুধু এপ্লিকেশন রেডি করে দিতে যেটা টোটালি ফাইন মনে হয়েছে। প্রোসেসিং ফি দিলে আমিও করে দিতে পারি নো প্রবলেম, ১০ টা ফাইল প্রোসেস করলেই আমার কানাডার টিকেট খরচ হয়ে যাবে।

কানাডার এপ্লিকেশন প্রোসেস অনেক ঝামেলার, তাদের ওয়েবসাইট এ অনেক সমস্যা আর ডকুমেন্ট ২ মেগাবাইট এর মধ্যে নিয়ে আসতে যে পরিমাণ কষ্ট করা লাগে তা বলে বোঝানো যাবে না। আমার ৩ দিন লেগেছে সব স্ক্যান করে এপ্লিকেশন কমপ্লিট করতে। দিনশেষে এত ঝামেলা করে ১০ বছরের ভিসা দেয় এইটা হচ্ছে সবচেয়ে ভাল দিক।

 

Contact

Email: sajedur1245@gmail.com

Facebook

 

আমার মাধ্যমে আপনার কানাডার ভিজিটর ভিসা প্রোসেস করতে চাইলে নিচের ফর্ম টা ফিল আপ করবেন। ফিরতি ইমেইল এ আমি আপনাকে আপনার ভিসা পাবার সম্ভাবনা কেমন, আমার ফি কিভাবে পেমেন্ট করবেন এবং এপ্লিকেশন প্রসেসের জন্য কি কি তথ্য লাগবে জানাবো।

Facebook Comments