ভার্সিটির প্রতি সেমিস্টার শুরুতে অল্প ছুটি আর কিছু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে যাই ঘুরতে৷ এবার ঠিক ছিল না কোথায় যাব। চায়না, শ্রিলংকা, মালদ্বীপ আরো কত কি চেক করলাম। শেষমেশ নেপাল ঠিক করলাম। ভিসার ঝামেলা নাই আর ইজি।
ঠিক করলাম যাব অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্প৷ জিবনে কোনদিন হাই এলটিটিউড ট্রেকে যাইনি৷ বান্দরবানের ট্রেক সহজ ব্যাপার, কিন্তু হাই এল্টিটিউড ট্রেকে সঠিক কাপড়চোপড়, গিয়ার, আর অনেক ছোটখাট বিষয়ে নলেজ দরকার হয়। এল্টিটিউড সিকনেস টা ছিল সবচে বেশি ভয়ের কারণ, আর ঘাড়ে ১২ কেজির ব্যাকপ্যাক নিয়ে পারবো কিনা সেটাও শিওর ছিলাম না।
গুগল করে ফেসবুক ঘেটে যা পেলাম তাই পড়লাম। মোটামুটি কনফিডেন্ট হয়ে টিকেট কেটে ফেললাম। ভয়ের জায়গাটা ছিল ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট, বছরের শুরুতেই প্লেন ক্র্যাশ মনের ভিতর একটা সুপ্ত ভয়ের জন্ম দিয়েছিল। একই এয়ারপোর্টে যাচ্ছি, কেন জানি অন্যরকম একটা ভয়।
এয়ারপোর্টে নেমেই সব সহজ হয়ে গেল৷
হোস্টেল বুক করলাম এয়ারপোর্টে নেমেই। রুম দেখানোর আগে নেপালি রিসিপশনিস্ট বললো চলো ভাই তোমারই দিন৷ কইলাম কেন? কয় ডর্মে খালি মেয়ে দিয়ে ভরা। সবাইরেই দেখি একটা না একটা মেয়ে জুটিয়ে ফেলে, তুমিও রাত পেরুলেই জুটিয়ে ফেলবা
গিয়ে দেখি ৬ জনের ডর্মে আমি একা পোলা। রুমে ঢুকেই পরিচয় হল সুপার গার্ল জেনেসার সাথে। জেনেসা কে নিয়ে আলাদা করে বিশাল লিখতে হবে। তারে নিয়ে লাঞ্চে গেলাম, একসাথে বেরুতে দেখে নেপালি রিসিপশনিস্ট সেই হাসি দিল। রাত অনেক পরের কথা ৩০ মিনিটের মাথায় একজন জুটায়ে ফেলসি
।
এরপর একসাথে লাঞ্চ করতে করতে তাকে বললাম বেজক্যাম্প যাচ্ছি। সে যাবে এভারেস্ট বেজক্যাম্প, তারপর নিজে থেকেই বললো আমি জয়েন করতে পারি। এরপর একসাথে শুরু করলাম।
এরপর থামেলে টুকটাক বাজার করে পরদিন সকালে রওনা দিলাম থামেলের উদ্দেশ্যে। সারাদিন বাসের উপর কেটে গেল। পরদিন সকালে ট্যাক্সি নিয়ে গেলাম টিমস কার্ড বানাতে। সেখানে গিয়ে দেখা হল ক্রিস্টেনের সাথে। ভেবেছিলাম আমার ছোট হবে, আমার তিনবছরের বড়৷ তারপরের শক টা ছিল সে কোডার। বিউটি উইথ ব্রেইন। তার ব্যাকপ্যাক সবচেয়ে বেশি অবাক করেছিল। অনেক কম জিনিষপত্র নিয়েও আমার ব্যাগ তার ডাবল। মেয়ে হয়েও কিভাবে এত ছোট ব্যাকপ্যাকে সব ফিট করে ফেললো তাতে অবাক হয়েছিলাম।
এরপর দুপুর, ২ টাতে নয়াপুল থেকে শুরু হল জার্নি, ৩/৪ ঘন্টা পর আমাদের ডেস্টিনেশন তিহকেডাঙা। সবচেয়ে সুন্দর জায়গাতে ছিল লজ টি৷ একদম ঝর্নার উপর লজ। রুমে বসে ঝর্নার পানির শব্দে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন ছিল ট্রেকের সবচেয়ে কঠিন দিন জানতাম না।